শিশুদের জন্য দীন শিক্ষাঃ আকীদা

*آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
অর্থাৎ, রাসূল তার রবের পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছেন ৷ আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে ৷ তারা সবাই আল্লাহকে , তাঁর ফেরেশতাদেরকে,তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁর রাসূলদেরকে মানে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “আমরা আল্লাহর রাসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি না ৷ আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি ৷ হে প্রভু ! আমরা তোমার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি ৷ আমাদের তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে। (সুরা বাকারাঃ ২৮৫)
*قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
অর্থাৎ, (হে নবী) আপনি বলুন, মহান আল্লাহ একক।আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন।তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন।তার সমতুল্য কেউ নেই। (সুরা ইখলাস)
আহমদ তার আব্বাকে বললঃ আব্বা! আমাদের শিক্ষক আমাদেরকে উপরের আয়াত ও সুরা তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ উপরোক্ত আয়াত ও সুরাটি মুসলমানের আকিদা হিসেবে পরিগণিত হয়।

আহমদঃ আব্বা আকীদা কি জিনিস?
আব্বাঃ আহমদ! আকীদা হলো কিছু বাস্তব বিষয়কে বিশ্বাস করা যা আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানিয়েছেন কিন্তু আমরা সেটাকে চর্ম চোখে দেখিনা। যেমনঃ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা, ফেরেশতা,আসমানী কিতাব,নবী-রাসুল, তাকদীর তথা ভাগ্য নির্ধারণ ও শেষ বিচারদিন ইত্যাদির উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এ সমস্ত বিষয় আমরা চোখে দেখি না কিন্তু তার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করি। কারণ আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়গুলো আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং তা বিশ্বাস করতে নির্দেশ করেছেন।

আহমদঃ নামাজ, রোজা,হজ্জ ও যাকাত কি আকীদার অন্তর্ভুক্ত আব্বা?
আব্বাঃ না আহমদ, আকীদা নয়, এগুলোকে ইবাদাত বলা হয়। আল্লাহর নির্দেশ হিসেবে মানুষেরা এগুলো পালন করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন নামাজ,রোজা এবং স্বচ্ছল ব্যক্তির উপর হজ্জ ও যাকাত আদায় করার। আর আহমদ! মু’মিন ব্যক্তি যা মনে প্রাণে বিশ্বাস ও স্বীকার করে নেয় তাই আকীদা। পক্ষান্তরে, মুসলিম যা আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে করে থাকে তাকেই বলে ইবাদাত। একজন মুসলিমের উপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে সে ইসলামের আকীদা মনে প্রাণে বিশ্বাস ও স্বীকার করার সাথে সাথে আল্লাহর ইবাদাত করবে।

আহমদঃ আব্বা! তাহলে মুসলিমের আকীদাগুলো কি কি?
আব্বাঃ আহমদ! মুসলিমের আকীদা হলো-
(১) আল্লাহর উপর বিশ্বাসঃ সে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তায়ালা এক ও একক। তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা,সর্ব শক্তিমান, সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে অবগত। তিনি পরম দয়ালু।
(২) ফেরেশতার উপর বিশ্বাসঃ একজন মু’মিন বিশ্বাস করবে যে, ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকুলের মধ্যকার একটি সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা নুর দ্বারা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। তারা সর্বদা আল্লাহ তায়ালার গুণকীর্তন করেন।
আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাসঃ আল্লাহ তায়ালা সকল নবীর নিকট যে সমস্ত কিতাব নাযিল করেছেন তা সত্য। সেগুলো হচ্ছে- তাওরাত,যাবুর, ইনজিল ও কুরান মাজীদ।
(৩) নবীদের উপর বিশ্বাসঃ আল্লাহ তায়ালা তার নবীগণকে এ দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন বিশ্ববাসীকে সঠিক পথের দিশা দিতে। তারা হচ্ছেন মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার সর্বোত্তম সৃষ্টি। আর সর্বোত্তম নবীদের মধ্যে নূহ (আঃ), ইবরাহিম (আঃ), মুসা(আঃ), ঈসা(আঃ) ও বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম প্রণিধানযোগ্য।
(৪) তাক্কদীরের উপর বিশ্বাসঃ ভালো মন্দ এই পৃথিবীতে যা কিছু হয় সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা আগেই লিখে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা যা ফয়সালা করেন কোন শক্তিই তাকে বাধা দিতে পারে না।
(৫) পুনরুত্থানে বিশ্বাসঃ আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মানুষকে মৃত্যুর পর পুণরায় জীবন্ত করে তুলবেন। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দুনিয়ার কর্মকান্ডের হিসাব নিবেন। দুনিয়াতে যারা তার আনুগত্য করেছে তাদের জন্য তিনি তাদেরকে দিবেন অনন্ত সুখের জান্নাত পক্ষান্তরে যারা তার নাফরমানী করেছে তাদেরকে অনন্ত শাস্তির স্থান দোযখে প্রবেশ করাবেন।

আহমদঃ আব্বা আপনার এ কথাবার্তা আমার হৃদয়ের দরজা খুলে দিয়েছে। ইসলামের প্রতি আমার সম্পর্ক ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, আমি চাই আপনি আমাকে আরও বেশি আলোচনা করবেন যেন আমি এগুলো আয়ত্ব করে নিতে সক্ষম হই এবং তা আমার হৃদয়ে গ্রথিত হয়।
আব্বাঃ খুব ভালো। আজকে এ পর্যন্তই। আগামীতে ইনশাআল্লাহ মুসলিমের আকীদার ব্যাখ্যা শুরু করব। ভবিষ্যতে আমাদের সাথে যেন তোমার ভাইয়েরা থাকে যাতে তারা আমাদের কথাবার্তা থেকে উপকৃত হতে পারে।