শিশুদের জন্য দীন শিক্ষাঃ আল্লাহর উপর বিশ্বাস

পরের দিন আহমদ ও তার ভাইয়েরা কাজকর্ম শেষ করে তাদের পিতাকে ঘিরে ধরল। তাদের মা ও তাদের সাথে বসে তার কথা একযোগে শুনতে লাগলেন।

পিতা তার কথা শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ ঈমানের পথে একজন মুসলিমের সর্ব প্রথম পদক্ষেপ হল সে আল্লাহ তায়ালাকে ও তার গুণাবলীতে বিশ্বাস স্থাপন করবে। সে বিশ্বাস করবে যে আল্লাহ তায়ালা এক, একক, অমুখাপেক্ষী, সৃষ্টিকর্তা, সর্বশক্তিমান, রিযিকদাতা, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞ এবং পরম দয়ালু।
আঃ রহমানঃ (আহমদের ছোট ভাই) আমাদেরকে এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করুন আব্বা।
পিতা দ্বীন সম্বন্ধে তার ছোট ছেলের আগ্রহ দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন। তিনি বললেনঃ অচিরেই আমি আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী গুলোকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব ইনশাল্লাহ।
একত্ববাদ
কাফেররা বিশ্বাস করত যে আল্লাহ তায়ালার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি আছে। ফেরেশতাগণ আল্লাহর কন্যা।
সোনামনিরা! এ কথা গুলো কিন্তু সবই ভুল। একদিন কাফেররা আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল আল্লাহ তায়ালার বংশ পরিচয় সম্বন্ধে। তারা বললঃ আল্লাহ তায়ালার বংশ পরিচয় আমাদেরকে বর্ণনা করুন। এ সময় আল্লাহ তায়ালা সুরা ইখলাস নাযিল করলেন।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
অর্থাৎ, (হে নবী) আপনি বলুন, মহান আল্লাহ এক এবং একক। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন। তার সমতুল্য কেউ নেই। (সুরা ইখলাসঃ ১-৪)

আল্লাহ তায়ালার কোন অংশীদার নেই। তিনি একক যার কোন দ্বিতীয় নেই। আল্লাহ ব্যতিত দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবকিছুরই সামঞ্জস্য বা তুলনা আছে কিন্তু, আল্লাহ তায়ালার কোন তুলনা হয় না। আর পৃথিবীর দেড়শত কোটিরও বেশি মানুষ (মুসলমানগণ) আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করে না। তারা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই সিজদা করে অন্য কারো নয়। তারা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তারই গুণকীর্তন করে।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ-
অর্থাৎ, আমরা শুধু তোমারই ইবাদাত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। (সুরা ফাতিহাঃ ৪)
আহমদঃ (পিতার দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে) আব্বা! আল্লাহ তায়ালা কোথায়? আমি তাকে দেখতে চাই।
আব্বাঃ (হেসে) আহমদ! পৃথিবীতে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে দেখতে পাব না। কারণ, আল্লাহকে দেখা সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এটাকে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জন্যে কিয়ামতের দিনের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। দেখ, আল্লাহ তায়ালা কি বলেছেন- আল্লাহ বলেছেনঃ
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ (22) إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ (23)
অর্থাৎ, সেদিন কিছু মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সুরা কিয়ামাহঃ ২২-২৩)
আর দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দেখেন কিন্তু, আমরা তাকে দেখি না।
আহমদঃ এটা কিভাবে সম্ভব যে, আমরা আল্লাহকে দেখি না অথচ তিনি আমাদেরকে দেখেন?
আব্বাঃ যখন বাতাস প্রবাহিত হয় তখন কি তুমি তা বুঝতে পার বা টের পাও?
আহমদঃ হ্যাঁ, বুঝতে পারি।
আব্বাঃ তুমি কি বাতাসকে দেখতে পাও?
আহমদঃ না আব্বা। কেউ বাতাসকে দেখতে পারে না।
আব্বাঃ আল্লাহ তায়ালাও আছেন কিন্তু,কোন চক্ষু তাকে দেখতে পায় না।
আল্লাহ বলেনঃ
لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ

অর্থাৎ, কোন চক্ষুই তাকে দেখতে পারে না কিন্তু, তিনি সব চক্ষুকেই দেখেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষ্মদর্শী ও সুবিজ্ঞ। (সুরা আনয়ামঃ ১০৩)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেনঃ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
অর্থাৎ, তার মত কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সুরা শুরাঃ ১১)